বেকারত্বের যাঁতাকলে পিষ্ঠ শিক্ষিতরা! শিক্ষা সনদের মেয়াদ পুড়িয়ে যাচ্ছে।




সানাউল হক :  





বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতে বিণিয়োগ তুলনামূলকভাবে তেমন একটা বাড়েনি। আর এ কারণেই দেশের অভ্যন্তরে কাজের পরিধিও বাড়েনি। এমনকি ছোট পদে চাকরির জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়লেও চাকরি হচ্ছে না অধিকাংশের। হাতেগোনা কয়েকজন চাকরি পেলেও অধিকাংশই রয়েছে শিক্ষিত বেকার। কাজের আশায় শিক্ষিত বেকারদের একটা অংশ অবৈধ পথে ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমায়। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও তাদের এই চলে যাওয়া মূলত বেকারত্বের নিষ্ঠুর বাস্তবতাকে ইঙ্গিত করে।

ফরিদগঞ্জ উপজেলাতে বহু সংখ্যক শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী রয়েছে, যারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পরিবারের কষ্টার্জিত অর্থের বিনিময়ে ¯œাতক-¯œাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে তাদের চাকরির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নির্ধারিত বয়সসীমার মেয়াদ পার হয়ে গেছে। আবার ক্ষেত্র বিশেষে অনেকের শিক্ষা সনদের মেয়াদও পুরিয়ে যাচ্ছে। দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে লেখা-পড়া শেষ করেও অনেকেই ভাল চাকরির অভাবে মানবেতর জীবন যাপনকে সঙ্গী করে নিতে একান্ত বাধ্য হচ্ছে। পরিবার থেকে নানান ধরনের মন্দ বাক্য শুনতে হচ্ছে এমনও শিক্ষিত বেকার যুবকের সংখ্যাও কম নয়।

পৌরসভার ভাটিয়ালপুর গ্রামের মোহাম্মদ তারেক মিয়া মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নিয়েও প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণে পিছপা হয় নি। জীবনের প্রতিটি ধাপে অভাব অনটনকে অগ্রাহ্যক করে, পরিবারের সদস্যদের সাথে একাত্মতা পোষন করে কৃষি জমি বিচরণের মধ্য দিয়েও শিক্ষা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। চাঁদপুর সরকারি কলেজে থেকে অর্থনীতিতে সম্মানসহ ¯œাতকোত্তর পাশ করে তিনি বহু খাতে চাকরির চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বিধিবাম। এত কষ্টার্জিত শিক্ষা সনদ অর্জন করছে ঠিকই, কিন্তু তার অপরাজিত শিক্ষা শুধু শিক্ষার হারেই থেকে গেল। ইতোমধ্যে পার হয়ে গেছে তার চাকরিখাতে নির্ধারিত বয়স।

জি এম আবু কাউসার, এস এম রেদওয়ান শ্রী রাধা কৃঞ্চ। উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর থেকেই তারা বিভিন্ন স্থানে লেখা পড়া করে সম্মানের সহিত ¯œাতক-¯œাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেছেন। পরিবারের নিকট শিক্ষা উপকরণ জাতীয় খরচ মেটানো খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ায় বন্ধুদের সহযোগিতায় ঢাকাতে ঠাঁই নিয়েছেন তারা বহু পূর্বেই। সেখানে ছাত্র-ছাত্রী পড়িয়ে কোন রকম চালিয়ে গেছেন পড়া-শুনার কাজ। বর্তমানে শিক্ষাখাতে দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী এই মানুষগুলো সরকারি এবং বেসরকারিখাতে চাকরির জন্য বহু চেষ্টা করেও হয়েছেন বিফল। ভাগ্যের প্ররিক্রমায় অতিক্রম হয়ে গেছে চাকরিখাতে শিক্ষা সনদের মেয়াদ।

উপজেলাতে এমন বহু সংখ্যক তারেক-কাউসারসহ আরো অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক রয়েছে, বর্তমানে যারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও শুধুমাত্র টিউশনির উপর নির্ভর করে টিকে আছে। জগতের নিয়মে ফুরিয়ে যাচ্ছে সময়। কিন্তু ঘুরছে না তাদের ভাগ্যের চাকা। দিন যত গড়াচ্ছে, ততই তাদের মাথায় ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা প্রকট আকার ধারণ করছে। চাকরি খাতে যোগ্যতা অর্জনকারীরা সুযোগ না পাওয়াতে অনেকেই বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে বেছে নিচ্ছে টিউশনিকে। যদিও গ্রামাঞ্চলে টিউশনির ব্যবস্থা তেমন পাকাপোক্ত নয়, তবুও তা দিয়েই তাদেরকে পুরো পরিবারের ঘানি টানতে হচ্ছে।\

উপজেলার এমনও প্রত্যন্ত অঞ্চল রয়েছে যেখানে পূর্বে থেকেই শিক্ষার হার অন্যান্য স্থানের তুলনায় বহু গুণে এগিয়ে রয়েছে। তা সত্ত্বেও এ সকল অঞ্চলের শিক্ষিত যুবকদের পিছু হটছে না বেকার নামক অভিশপ্ত ও ঘৃনিত পদবি।   তারপরও হতাশাকে ঝেড়ে ফেলে নতুন আশায় বুক বেধে অশিক্ষিতের কাতারে দন্ডায়মান হতে দেয়নি তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে। শিক্ষিত হওয়ার মনোভাব নিয়ে উপজেলার প্রতিটি গ্রামের সাধারণ মানুষ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাদের ছেলে মেয়েদের ।

আইএলও-এর মতে, যারা সপ্তাহে অন্তত এক ঘন্টা কর্মে নিয়োজিত থাকবেন, তারা আর বেকার নন। বাংলাদেশে সপ্তাহে এক ঘন্টাও কাজ করতে পারেন না, এমন বেকারের সংখ্যাও কম নয়। তা সত্তেও শিক্ষিত বেকারদের একাংশ বিয়ে করে সংসারে উজ্জীবিত হওয়ার সুযোগ খুঁজেন। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিয়ে পরবর্তী জীবনে এসে তারা আশানুরূপ সুখি হতে পারে না। অবশিষ্টদের কেউ কেউ সমাজের অভিশপ্ত এবং নিষিদ্ধ পন্থা অবলম্বন করে মাদক ও অন্যান্য অবৈধ কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েন।

তবে শিক্ষিতদের জন্য স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য যুব উন্নয়নের অধীনে খন্ডকালিন প্রশিক্ষনের মধ্যে অস্থায়ী ভাবে বেকারদের একটা বিশাল অংশকে চাকরি প্রদান করেছেন। কিন্তু এ প্রকল্পের আওতায় উচ্চ শিক্ষার শিক্ষার্থীরা বেমানান। তাদের মতে, ব্যয় বহুল অর্থ খরচ করে ও জীবনের সোনালী ১৮/২০ বছর সময় পড়াশুনা শেষে অস্থায়ী প্রকল্পের অধীনে কাজ করাটা এক প্রকার মিথ্যে সান্ত¡না।

শিক্ষিত বেকারদের সংখ্যা দিনাদিন একই অবস্থানে বিদ্যমান থাকলে,এতে করে দেশের উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাবে। আর সার্বিকভাবে ভোগের মাত্রা বেড়ে যাবে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে এক ধরণের অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে এই বেকার জনশক্তি। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সারা দেশ ব্যাপি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আর বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উদ্দ্যেক্তাদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানেরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এইচ এম মাহফুজুর রহমান এ প্রতিনিধিকে জানান, বাংলাদেশ সরকার যুব উন্নয়নের অধিনে সারা দেশ ব্যাপি যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করেছেন, এ সরকারী বেসরকারী প্রকল্পগুলোর অধীনে বহু সংখ্যক শিক্ষিত বেকাররা স্বাবলম্ভি হতে পারবে। এখান থেকে তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জলতার পথ খুজে পাবেন বলে তিনি মনে করেন।





নবীনতর পূর্বতন