সাংবাদিক নির্যাতন অসহনীয় পর্যায়!বুয়েটে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ছাত্রলীগের মারধরের স্বীকার।

সানাউল হকঃ


সাংবাদিক, চিকিৎসক, পুলিশ, শিক্ষক, এ পেশাগুলো অতি সম্মানি পেশা হিসেবে সাধারণ মানুষের নিকট পরিচিত ছিলো। একটা সময়ে যখন চিকিৎসকরা রোগীদের সাথে ক্ষেত্রবিশেষে অমানবিক আচরণ করা শুরু করলেন, তখন থেকে চিকিৎসারা হয়ে গেলেন সাধারন মানুষের কাছে কসাই নামে পরিচিত। এভাবে করে অন্যান্য সম্মানিত শ্রেণী পেশার মদ্ধেও যখন বর্ণ বৈসম্যের বিবেধ দেখা দিলো তখন থেকে এ পেশাগুলোকে মানুষ ঘৃবার চোখে তাকাতে শুরু করেছে।

সাম্প্রতিককালে সম্মানিত এ পেশাগুলোর মদ্ধে সাংবাদিক পেশাটি সাধারন মানুষের কাছে অতি জঘন্য পেশা হিসেবে অতিব পরিচিতি বিস্তার করেছে। সাংবাদিকতা যদি হয় এক চেটিয়া, তবে এমন পরিস্থিতিতে গন ধোলাই এবং বিপক্ষ জনতার উত্তম মাদ্ধমে আঘাত বহন করবেই এটাই বাস্তব। সাধারন শ্রেণী পেশার মানিষের কথানুযায়ী সাংবাদিকতা হচ্ছে একটি মহান পেশা। এখানে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করাটাই হচ্ছে মুল কাজ। আজ সেখানে পক্ষ পাতিথ্য করে গোটা দেশটা অরাজকতায় পরিনত হয়ে আছে। এর থেকে পরিত্রাণ করার জন্য একমাত্র সাংবাদিকদের ভূমিকাই ছিলো সহজ এবং সমৃদ্ধির। কিন্তু তারা আজ দিক বে দিক হয়ে যাওয়াতে দেশে শান্তি বিরাজমান নেই, আর তারাও পক্ষপাতী হওয়ার কারণে এ ঘাট ও ঘাটে অপমান অপদস্থ হতে হচ্ছে।                                    
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হলে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে শনিবার রাতে ছাত্রলীগের মারধর ও হয়রানির শিকার হয়েছেন ৩ সাংবাদিক। হলটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে আটকে রাখা হয়েছে এমন খবর পেয়ে সেখানে সংবাদ সংগ্রহে যান তারা। তবে বুয়েট ছাত্রলীগের দাবি, সেখানে অপহরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। হামলার শিকার তিন সাংবাদিক হলেন- দৈনিক জনকণ্ঠের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার মুনতাসির জিহাদ, দৈনিক ইত্তেফাকের বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার কবির কানন, কালের কণ্ঠের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মেহেদী হাসান। 

ভুক্তভোগী গণমাধ্যম কর্মীরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আটকে রাখা হয়েছে এমন খবর পেয়ে তারা সেখানে যান। হলে প্রবেশ করতে গেলে গেটটি তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান তারা। এ সময় ভেতরে ঢুকতে চাইলে হলের দায়িত্বরত নিরাপত্তা প্রহরী জানান, ভেতরে ঢুকতে ছাত্রলীগের নিষেধ আছে। পরে হলের নিরাপত্তা প্রহরীকে পরিচয় দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন তারা।

ভুক্তভোগীরা জানান, হলে প্রবেশ করার পাঁচ মিনিটের মধ্যে শেরেবাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন এবং ভেতরে প্রবেশের কারণ জানতে চান। এ সময় শিক্ষার্থী অপহরণের খবরের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের মারধর করা হয়। মোবাইল ফোন, পত্রিকার পরিচয়পত্র ও মানিব্যাগ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাদের নেয়া হয় হলের ক্রীড়া কক্ষে। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে কক্ষটিতে তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। 

মারধরের বিষয়ে ভুক্তভোগী মেহেদী হাসান যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ধরে নিয়ে গেছে এমন তথ্য পেয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম। কারণ ঘটনাটির বিষয়ে একেকজন একেক রকম তথ্য দিচ্ছিল। হলের ভেতর প্রবেশ করার পরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে মারধর করে। ঘটনার বিষয়ে বুয়েট ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল যুগান্তরকে বলেন, সেখানে শিবিরের এক নেতাকে ধরা হয়েছিল। সাংবাদিকরা সেখানে গেলে বিষয়টি নিয়ে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তবে কাউকে মারধর করা হয়নি। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রাব্বানী যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। এটি দুঃখজনক ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বুয়েটের শেরেবাংলা হল প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নবীনতর পূর্বতন