সানাউল হকঃ
১৫ টি ইউনিওন ও ১ টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর জেলার মধ্যে অন্যতম উপজেলা ফরিদগঞ্জ। কথিত আছে যে এ উপজেলা বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত। বিগত সবগুলো সংসদ নির্বাচনেই বিএনপি এ আসনে ভোটের মাদ্ধমে বিজয়ী হয়েছে। শুধুমাত্র ৫ ই জানুয়ারিতে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহন না করাতে বিনা প্রতিদন্দিতায় আওয়ামীলীগের প্রার্থী ড. শামছুল হক ভূইয়া বিজয়ী হয়েছে।
এ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন বর্তমান এমপি ড. শামছুল হক ভূঁইয়া, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান। তারা দু’জন প্রচার-প্রচারণাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। এছাড়া মাঠে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. হারুন অর রশীদ সাগর, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহিদুল ইসলাম রোমান, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আমির আজম রেজা।
স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা জানান, ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই আসনে প্রথমে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির মাইনুল ইসলামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন ড. শামছুল হক ভূঁইয়া। পরে মাইনুল ইসলামের মনোনয়ন বাতিল হলে তিনি আওয়ামী লীগের টিকিটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এমপি হওয়ার নিজস্ব বলয় তৈরি করতে এবং আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজাতে পছন্দের লোকদের স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল পদে বসান। তারাই গত ৫ বছর দলের পদ-পদবীসহ সব ধরনের সুবিধা নিয়েছেন। দলের একটি অংশকে কাদিয়ানি আখ্যা দিয়ে দলীয় সব কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখা হয়েছে। এ কারণে বঞ্চিতরা তার বিপক্ষে রয়েছে।
অভিযোগ আছে, এমপির প্রভাব খাটিয়ে তার কাছের নেতারা টেন্ডারবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দফতরি নিয়োগে ছাত্র শিবিরসহ বিরোধী দলের ছেলেদের নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া এমপির নিজের কলেজের শীর্ষ পদেও সাবেক শিবির নেতাকে বসিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের একটি অংশের মাঝে।
এছাড়া আগামী নির্বাচনে বর্তমান এমপিকে মনোনয়ন দেওয়া হলে ছাড় দেবেন না সাংবাদিক শফিকুর রহমানের অনুসারীরাও। তারপরও বিএনপি অধ্যুষিত এ আসনে ড. শামছুল হক ভূঁইয়াকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচনি লড়াই জমিয়ে তুলতে পারবেন বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
এ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান। এর আগে তিনি দু’বার মনোনয়ন পেলেও জয়ী হতে পারেননি। ২০১৪ সালে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্থানীয় রাজনীতি নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন। তবে ২০১৭ সালে আবার এলাকায় আসেন এবং এলাকায় গণসংযোগ করেন। দু’বার নির্বাচন করা এই নেতার পুরনো বেশিরভাগ নেতাই এখন তার সঙ্গে নেই। তাদের কেউ কেউ এখন মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন। তারপরও তিনি দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে বিশ্বাস করেন তার সমর্থকরা।
মনোনয়ন প্রত্যাশী ডা. হারুনুর রশিদ সাগর বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। চট্টগ্রাম মেডিক্যালে শিবিরের বিরুদ্ধে লড়েছি। এরপর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত গত ১৫ বছর ধরে। তাছাড়া রাজনীতিতে বিভিন্ন গ্রুপের ঊর্ধ্বে থাকার চেষ্টা করেছি। তাই সবার সঙ্গেই আমার সুসম্পর্ক রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এবার জননেত্রী শেখ হাসিনা তরুণ নেতৃত্বকে প্রধান্য দেবেন। তাই আমি আশাবাদী। দল যদি আমাকে মনোনয়ন আমি নির্বাচন করবো। আর জয়ী হলে উন্নয়নের পাশাপাশি ফরিদগঞ্জকে মাদকমুক্ত করবো। ফরিদগঞ্জে রাজনীতির নেতৃত্বে সংকট রয়েছে। এখানে গ্রুপিং স্ট্রংলি মেনটেইন করেন সিনিয়র দু’জন। তবে এর বাইরেও অনেক নেতাকর্মী আছেন যারা গ্রুপিং পছন্দ করেন না। সব গ্রুপের নেতাকর্মীদের আমার সুসম্পর্ক আছে।’
বর্তমান এমপি বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দফতরি নিয়োগ আমি দেইনি। নিয়োগ প্রক্রিয়া যখন হয় তখন আমি দেশেও ছিলাম না। তারপরও যতগুলো লোক নিয়োগ হয়েছে তাদের প্রায় ৯৫ ভাগই আওয়ামী লীগ সমর্থক। অন্য দল বা মতের যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের বিষয়ে আমি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টির ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনোনয়ন বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী। কারণ, গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের মেগা প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান। জননেত্রী শেখ হাসিনার একজন কর্মী এবং প্রতিনিধি হিসেবে এলাকায় যেসব কাজ করা দরকার ছিল সেগুলো শতভাগ সম্পন্ন করেছি। তাছাড়া আওয়ামী লীগের কোনও বদনাম হোক এ ধরনের কাজ কাজ করিনি। আগামীতে যেন আওয়ামী লীগ বিজয়ী হতে পারে সেজন্য কাজ করেছি।’
১৯৯১ সালে বিএনপি এই আসনটি ভোটব্যাংক তৈরি করেছিল। এ আসন থেকে চারবার নির্বাচিত হয়েছিলেন মরহুম আলমগীর হায়দার। ২০০৮ সালের নির্বাচনের অল্পদিন আগে মাঠে নেমে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়ে আলোড়নের সৃষ্টি করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ব্যাংকিং ও রাজস্ব বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা বিএনপির সভাপতি লায়ন হারুন অর রশীদ।
এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোতাহের হোসেন পাটওয়ারী, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ হান্নান, ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্বাস উদ্দিন, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হুমায়ুন কবির ব্যাপারী।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি হারুনুর রশিদ বলেন, ‘এলাকার মানুষের সঙ্গে আছি সব সময়। নেতাকর্মীরা অসংখ্য মামলা-হামলার শিকার। তাদের পাশে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের নেত্রী জেলে। এ অবস্থায় দল নির্বাচন নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটিও দেখার বিষয়। মনোনয়ন বিষয়ে আমি আশাবাদী। দল নির্বাচনে গেলে আমরা প্রস্তুত আছি।’
আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী মোতাহার হোসেন পাটওয়ারী বলেন, ‘বড় দলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকেই। তবে আমরা অন্য যেকোনও সময়ের থেকে এখন ঐক্যবদ্ধ। দল যাকে মনোনয়ন দেবে আমরা তার পক্ষেই কাজ করবো। দলের এই দুর্দিনে আগের মতো হবে না, ঐক্যবদ্ধভাবেই নির্বাচন করবো।’
Tags
Slider