প্রাচীন বটগাছের উপর তালগাছটি কালের শাক্ষি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে


সড়কযোগে চাঁদপুর থেকে ফরিদগঞ্জে প্রবেশের মূল যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল চাঁনবাড়িয়া থেকে গুদারাঘাট পর্যন্ত। ফরিদগঞ্জ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পুরাণ রাস্তা হিসেবে জনসাধারণের নিকট যার নামডাক ছিল অতি পরিচিত। প্রায় ৪ বর্গ মি. আয়তন নিয়ে জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য ২টি পুরানো কালভার্ট ছিল। কালভার্ট দুটি ভেঙ্গে দেয়াতে সড়কটি আজ কোনো কোনো স্থানে ফসলি জমির রূপ ধারণ করে আছে। বর্তমানে পুরানো এ সড়কটির আশেপাশে অন্যান্য স্থান থেকে আসা লোকজন বসতভিটা নির্মাণ করেছে। কিন্তু তার বেহাল দশার কারণে স্থানীয় ও আগন্তুক লোকজনের চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এ সড়কটির পাশ দিয়েই বয়ে গেছে যে ডাকাতিয়া নদীটি, তার নাম বিভিন্ন গল্প-কবিতায় ছড়িয়ে আছে। সড়কটির প্রতি কারো দায়িত্ববোধ না থাকাতে অযত্নে-অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে।



সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাঁনবাড়িয়া থেকে শুরু করে ধানুয়া দাশ বাড়ির স্কুল সংলগ্ন সড়কের বুকে বানানো হয়েছে গরুর খামার। বর্তমানে তা সরিয়ে কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণ করে দিয়েছে। ধানুয়া দাশবাড়ির পাশ দিয়ে চলে যাওয়া সড়কের উপরে বসানো হয়েছে শৌচাগার। বাকি অংশজুড়ে মাটি কেটে ফলানো হয়েছে ধানের চারা ও বিভিন্ন কৃষিশস্য। ভাটিয়ালপুর চৌরাস্তা থেকে বটগাছের উপর তালগাছ পর্যন্ত বহিরাগত বেদে সম্প্রদায় বানিয়ে নিয়েছে তাদের বসতভিটা। যার কারণে আশপাশে স্থানীয় ফসলী জমির ক্ষতিসাধন হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। গুদারাঘাট সংলগ্ন সড়কের দু পাশে মাছ চাষাবাদের ঝিল হওয়াতে বহু পুরানো দিনের গাছগুলো পাড়ের মাটিসহ ভেঙ্গে যাচ্ছে। সড়কটি পানির নিচে তলিয়ে যেতে আর বেশি দিন সময় লাগবে না।



স্থানীয় বাসিন্দা হুমায়ুন খান জানান, যখন চাঁদপুর-রায়পুরে বর্তমানের যাতায়াতের এ সড়কটি ছিল না, তখন পুরাণ রাস্তাটিই ছিল ফরিদগঞ্জ-রায়পুরের একমাত্র সড়ক। যার বুকের ওপর দিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করত চার চাকা বিশিষ্ট উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী লক্কর-ঝক্কর জীপ গাড়ি ও রিঙ্া। পরবর্তীতে ফরিদগঞ্জ-চাঁদপুরের যাতায়াত ব্যবস্থা মসৃণ করার জন্যে নির্মাণ করা হয়েছে বর্তমান সড়কটি। সড়কের পাশে বসবাসকারী কয়েকজন জানান, আরো ক'বছর পূর্বেও পুরাণ রাস্তায় চলাচলের জন্য দুটি সেতু ছিল। একটা ভাটিয়ালপুর পুরাণ বাড়ির পিছনে, অন্যটি ভাঙ্গা বাড়ি সংলগ্ন, যেখানে বর্তমানে আমরা কয়েকটা পরিবার বসবাস করি। সেতু দুটি ভেঙ্গে দেয়ার পরে সাবেক পৌর মেয়র মঞ্জিল হোসেনের কাছ থেকে আমরা চলাচলের জন্য একটা কালভার্ট স্থাপন করিয়ে নেই। বর্তমানে স্থাপন করা কালভার্টটি সরু হওয়ায় তা দিয়ে আমাদের স্বাভাবিক চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে।



স্থানীয়রা জানান, গুদারাঘাট এলাকা থেকে চাঁনবাড়িয়া পুল পর্যন্ত রাস্তার বিভিন্ন স্থানে যে হারে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে, তা সংস্কার করা না হলে অচিরেই কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবে এক সময়ের এ সড়কটি। কর্তৃপক্ষের সঠিক উদ্যোগের অভাবে সড়কটি আজ অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে। পুরাণ এ সড়কটি সংস্কার করে রাখলে বাইপাস হিসেবে জনসাধারণের ব্যবহারে আসে। ঈদ অথবা বিভিন্ন দিবসে চাঁদপুর-রায়পুর মহাসড়কে যানবাহন ত্রুটিজনিত কারণে ভিড় জমে থাকে। বিশেষ করে ফরিদগঞ্জ থেকে ভাটিয়ালপুর পর্যন্ত। এ পর্যন্ত অতিক্রম করার জন্য যদি পুরাণ রাস্তটি পুনঃনির্মাণ করা হয় তবে জনসাধারণ আর এলাকাবাসীর চলাচলে স্বস্তি ফিরে আসতো বলে ধারণা করা যায়।



প্রবীণ ব্যক্তিত্ব মোঃ বাদশা মিয়া জানান, পুরাণ রাস্তার বুকের ওপর প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠেছে প্রায় দুই শতাব্দীরও বেশি প্রাচীন একটি বটগাছের উপর তালগাছ। বটগাছটির বুকের উপর বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে উঁচু তালগাছটি। জানা যায় তাদের পূর্ববর্তী পুরুষদের জন্ম থেকে এটি এমনই দেখে এসেছে, যা বর্তমানেও রয়েছে। বটবৃক্ষের ছায়া আর তালগাছের দেয়া মৌসুমী ফল এ সবটাই স্থানীয় আর আগন্তুকদের মুগ্ধ করছে। এ সড়কের ওপর থাকা বটগাছের উপর তালগাছ আর ডাকাতিয়া নদীর দৃশ্য দর্শনার্থীদেরকে বিমোহিত করে। কিন্তু বর্তমানে কালভার্টগুলো ভেঙ্গে দেয়াতে সড়কটি আজ কোনো কোনো স্থানজুড়ে যাতায়াতের জন্য অনুপযোগী হয়ে আছে। আবার কোনো স্থানে পানির লাইন প্রবাহিত করার জন্য কেটে দেয়া হয়েছে। দু পাশে বেড়ে ওঠা নতুন পুুরাতন বিভিন্ন ধরনের গাছগুলো অযত্নে অবহেলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।


এছাড়াও প্রাচীনকালের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক পুরাণ রাস্তার পুনঃসংস্কার করা সময়ের দাবি। প্রায় যুগ যুগ ধরে এ সড়কের আশপাশে বহু সংখ্যক পরিবার বসবাস করে আসছে। বিভিন্ন দিবসে দূর দূরান্ত থেকে বিস্ময় সৃষ্টিকারী বটগাছের উপর তালগাছটি দেখতে আসা লোকজনদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। অথচ এটিই হতে পারে ফরিদগঞ্জে অন্যতম দর্শনীয় স্থান।



উপজেলা প্রকৌশলী অফিসার মোঃ জিয়াউল হক মজুমদার বলেন, চাঁনবাড়িয়া পুল থেকে গুদারঘাট পর্যন্ত চাঁদপুর থেকে ফরিদগঞ্জে প্রবেশের এ সড়কটি এখন পরিত্যক্ত হয়ে আছে। চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কটি নির্মাণ হওয়ার পর সড়কটি আর ব্যবহৃত হয় না। আর এ সড়কটির দায়িত্ব এলজিইডির অধীনে নেই। স্থানীয় এমপি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া যদি সরকারি বাজেট করেন তবে আমরা সড়কটি পুনঃসংস্কার করতে সহজ হবে।




উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এইচ এম মাহফুজুর রহমান বলেন, সড়কটি যেহেতু শতাব্দী প্রাচীন তাই এর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এছাড়াও পুরানো এ সড়কটি বাইপাস হিসেবে ফরিদগঞ্জবাসীর কাজে আসবে। খুব শীঘ্রই সড়কটি পরিদর্শন করে এর বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।


নবীনতর পূর্বতন