নৌ পথে ৭০ কিঃমিঃ ভাড়া ১২০! সড়ক পথে ১৫ কিঃমিঃ ভাড়া ২৫০ টাকা!



রাজধানী ঢাকা থেকে নৌরূটে চাঁদপুর শহরে পেঁৗছতে যে পরিমাণ টাকা যাতায়াতে খরচ হয়, তার কয়েকগুণ বেশি খরচ হয় জেলা শহর থেকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরে পেঁৗছতে। যে কোনো দিবস বিশেষ করে ঈদ-পূজা অথবা সরকারি ছুটি হলে ঢাকা থেকে চাঁদপুর শহরে আসতে নৌপথে ভাড়া লাগে সাধারণত ১০০/১৫০ টাকার মতো। কিন্তু জেলা শহর থেকে ফরিদগঞ্জ যেতে যাতায়াত খরচ গুণতে হয় জনপ্রতি ২০০/৩০০ টাকার মতো। বাড়ি যাবে স্বজনদের কাছে এ আনন্দ মলিন করতে নারাজ, তাই অনেক ক্ষেত্রে বাড়তি ভাড়া মেনে নিয়ে নীরবে গন্তব্যে পেঁৗছতে হয়।



বিস্তৃত আয়তন নিয়ে গঠিত উপজেলা ফরিদগঞ্জের দূরত্ব চাঁদপুর থেকে প্রায় ১৬ কি.মি.। মোটরযানে সর্বোচ্চ ২০ মিনিটের পথ অতিক্রম করতে এত বিপুল খরচ খোয়াতে গিয়ে যাত্রীদের একটা সময়ের জন্যে হলেও ভোগান্তি মনে হয় বলে ঢালাও অভিযোগ জনসাধারণের।


গত ঈদুল ফিতরের সময় যাতায়াত ভাড়া নিয়ে সমস্যায় পড়া মোঃ ফারুক জানান, বিশেষ করে দু' ঈদ, পূজা ও সরকারি ছুটিকে পুঁজি করে চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ-লক্ষ্মীপুর রূটে যাতায়াত ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে দিনমজুর, স্বল্প আয়ের শ্রমিক, ফুটপাতে অস্থায়ীভাবে আয় রোজগার করা শ্রমিকরাসহ অন্য মানুষেরা এ দিবসগুলোতে আত্মীয়-স্বজনের সাথে একাকার হতে বাড়ি আসতে আগ্রহী হন। বৈধ-অবৈধভাবে যারা অধিক হারে অর্থ উপার্জন করেন, তাদের হয়তবা এ ক'টা দিনের জন্যে ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে মাথা ব্যথার কোনো বিষয় নয়। কিন্তু সাধারণ মানুষগুলোর কাছে এটা অনেক জুলুম। তাই এ বিষয়গুলোকে শুধু অভিযোগ হিসেবে দেখলেই হবে না গণপ্রতিরোধ করে আইনী সহায়তায় সমস্যা লাঘব করতে হবে বলে ক্ষুব্ধ ফারুক জানান।



চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচলকারী মোঃ হাবিবুর রহমান খান, চাঁসকর প্রাক্তন ছাত্র মারুফসহ ঢাকা হকার্স মার্কেটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ওমর ফারুক আজাদ জানান, ঈদ অথবা বিভিন্ন দিবসগুলোতে চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ রূটে যাতায়াত খরচ অনেক বেড়ে যায়। গত ঈদুল আযহার সময় চাঁদপুর থেকে ফরিদগঞ্জের উদ্দেশ্যে সিএনজি স্কুটারযোগে পাড়ি দিতে গেলে যাতায়াত ভাড়া নিয়ে আমরা বিব্রত হই। ঢাকা থেকে নৌপথে চাঁদপুরে এসেছি ১২০ টাকা খরচে। আর চাঁদপুর থেকে ফরিদগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যেতে যাতায়াত ভাড়া গুণতে হচ্ছে জনপ্রতি ২৫০ টাকা করে। এটি হচ্ছে দিনের বেলার ভাড়া। আর রাতের বেলায় ঈদ ছাড়াও অনেক সময় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দিয়ে ফরিদগঞ্জে যেতে হয়। যা আমাদের জন্যে রীতিমত এক ধরনের ভোগান্তি। অনেক সময় ফেরত যেতে মনে চায়। তবুও নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা।



ফরিদগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষমান ক'জন কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সাথে এ প্রতিনিধির আলাপকালে তারা বলেন, প্রতিবছরই ঈদ কেন্দ্রিক সময়ে আমাদের কোনো না কোনো পরীক্ষা অথবা কোচিং ক্লাস করানো হয়ে থাকে। একান্ত বাধ্য হয়ে চাঁদপুরের বিভিন্ন কলেজে যাওয়া লাগে। সে ক্ষেত্রে ঈদ কেন্দ্রিক সময়ে স্থানীয় আর বহিরাগত যাত্রীদের ভিড়ের কারণে আমরা দৈনন্দিন যাত্রীরা অবহেলিত হয়ে পড়ি। স্থান-কাল ভেদে যদিও আমাদের বাহনে উঠানো হয় সেখানে দ্বিগুণ ভাড়া দাবি করে থাকে। বাধ্য হয়ে তাদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে পাড়ি দিতে হয় গন্তব্যস্থলে। দেশের অন্যান্য স্থান থেকে আসা আমাদের সাথে অতিথিরা এ সব দেখে বিরক্তবোধ হোন। ঈদ অথবা বিভিন্ন দিবসগুলো জনসাধারণের আনাগোণা যেহেতু পূর্বের তুলনায় একটু বেশিই হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে না হয় ৫-১০ টাকা অতিরিক্ত নেয়া যায়। এটা করলে উভয়ের জন্যে সহনশীল বজায় থাকতো।



ফরিদগঞ্জ শাশিয়ালী গ্রামের মোঃ আশিক হাজী জানান, আমি ঢাকাতে একটা ছোট ব্যবসা করে পরিবার পরিজন নিয়ে আছি। সময় সাপেক্ষে আমাকে প্রায়ই ফরিদগঞ্জে আসতে হয়। বিশেষ করে ঈদ আগমনে নাড়ির টানে অবশ্যই বাড়ি ফিরতে হয়। ঢাকা থেকে চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনালে অধিক বিলাসিতাবিহীন আসি সীমিত খরচে। আর চাঁদপুর থেকে তার দ্বিগুণ হারে ভাড়া বহন করে আসতে হয় ফরিদগঞ্জে। আবার ফরিদগঞ্জ থেকে আমার নিজ বাড়িতে প্রবেশ পথে খরচ হয় তার চেয়ে বেশি। এ নিয়ে প্রতিবার চালকদের সাথে বাগ্বিত-া হয়। যদি গড় হিসেব করা হয়, তাহলে ঈদ অথবা কোনো গুরুত্বপূর্ণ দিবসে ঢাকা থেকে ফরিদগঞ্জে প্রবেশ পথে খরচ হয় হাজার খানেক টাকার মতো।



উপজেলার বাসিন্দা হাজী মোঃ জাকির হোসেন জানান, ঈদ উপলক্ষে কয়েক ধাপ অতিরিক্ত ভাড়া বাড়িয়ে নেয় এক ধরনের চালক। ঈদ পরবর্তীতে একইভাবে বাড়তি ভাড়া প্রদান করে যাত্রীদের কর্মস্থলে যেতে হয়। মাঝেমধ্যে অন্যান্য সময়ে বেশি রাত হলেই অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে বসে। যা রীতিমত অমানবিক পর্যায়ে দাঁড়ায়। বেশি রাত হলে না হয় ভাড়া কিছু বাড়িয়ে দেয়া যায়। কিন্তু চালকদের বেপরোয়া দাবি অনুযায়ী ভাড়া দিতে গেলে মনে ক্ষোভ জন্মায়। তবে চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের চালকরা বলেন ভিন্ন কথা। তাদের কথানুযায়ী ঈদ বছরে ২ দিন আসে। আর সে দু'দিন আমরা আমাদের পরিবারের সকলের সাথে হাসি খুশি থেকে বঞ্চিত হয়ে যাত্রীদের সেবায় নিয়োজিত থাকি। সে হিসেবে আমরা বাড়তি ভাড়া দাবি করাটা দোষনীয় কি? এ ক্ষেত্রে যাত্রীরা বলেন, বাড়তি ভাড়ার ক্ষেত্রে একটা সীমা থাকা উচিত। তারা যেভাবে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি নিচ্ছে তা তো সরাসরি জুলুম।


ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এএইচএম মাহফুজুর রহমান বলেন, চাঁদপুর থেকে ফরিদগঞ্জে প্রবেশের অধিক ভাড়া সংক্রান্ত বিষয়টি আমাদের আয়ত্তের বাইরে। এটি জেলার বিষয়। তাই জেলার বিষয়টি নিয়ে আমি এখানে কিছুই বলতে পারবো না। ওখানের সমস্যা জেলা কেন্দ্রিক লাঘব করবে। আর ফরিদগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রী পরিবহনের উপর বরাবরই আমাদের সজাগ দৃষ্টি থাকবে। বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বের সাথে নেয়া হবে। কোনোভাবেই যেনো যাত্রীরা হয়রানির শিকার না হয়।


জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান বলেন, এ সমস্যাগুলো অত্যন্ত কঠিন। চালক-যাত্রী উভয়ের মাঝে মানবতার অটুট বন্ধন থাকতে হবে। ঈদ বা অন্যান্য দিবসগুলোর সুযোগ নিয়ে যাত্রী হয়রানি মানবতার কল্যাণে শোভনীয় নয়। যাত্রীদের বিষয়টি বুঝতে হবে চালকদের। আর অনেক ক্ষেত্রে চালকদের রুটি-রুজি নির্ভরশীল যাদের দিয়ে, হয় তাদের সাথে সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হবে। উভয়ের মাঝে সামঞ্জস্য বজায় থাকলে এ সমস্যা দূরীকরণ খুবই সহজ হবে।

নবীনতর পূর্বতন