সানাউল হক :
স্বাধীনতার এত বিলম্বিত সময়ের পর যেখানে যুদ্ধাপরাধী ও পরবর্তীতে নামকরণ হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্য মোটামোটি ভাবে শেষ করা হলো, সেখানে যদি
এই বিষয়টা বারংবার ইস্যু হয়ে আসে তবে দেশে শান্তি বিরাজমান হওয়াটা কঠিন হয়ে পড়বে। রাজনৈতিক নাগরিক থেকে শুরু করে সামাজিক, অর্থনৌতিক, ব্যবসায়িক সাধারন জনগনকে যে কোন বিষয় পরাজিত করতে অথবা মান সম্মান ক্ষুন্ন করতে জঘন্য এই নামটিকে ইস্যু করে দেশের এবং ব্যক্তির মান ক্ষুন্ন করে এক শ্রেণীর অসাধু আনিষ্টকারী। পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রেই যুদ্ধ হয়েছে, যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশ বিরোধিতাকারীদের বিচার হয়েছে এবং হচ্ছে, কোন দেশেই এই বিষয়টাকে ইস্যু বানানো হচ্ছেনা। শুধুমাত্র বাংলাদেশেই এই পরিস্থিতি। দেশদ্রোহী, দেশবিরোধী,যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধ একটি জঘন্য অপরাধ। যাকে তাকে অন্যায়ভাবে এই অপরাধে শামিল করাটাও একটা গুরুতর অপরাধ বলে মনে করেন বিশ্লেশকরা।
গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়া জাতীয় নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান ইশতিহারের মদ্ধে অন্যতম দাবী ছিলো বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধী তথা যুদ্ধাপরাধীদের আইনের মাদ্ধমে এনে বিচার করা। অনেক জল্পনা কল্পনার আবষাণ ঘটিয়ে অবশেষে দশম জাতীয় নির্বাচন হলো। ক্ষমতায় উত্তরাধিকারীনি হিসেবে ভোটের নিয়মনুযায়ী শেখ হাসিনার অধীনেই চলে আসলো শাষন ব্যবস্থা । প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় আসার পর পরেই একে একে ঘটে কয়েকটি নাটকীয় ঘটনা। এর মাযে সবছেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী হিসেবে যা ঘটলো তা হচ্ছে বিডিয়ার বিদ্রোহ। সেই সময়ে দেশের মেরুদণ্ড হিসেবে যাদের দেখা হয়েছিলো সেই ৫৭ জন সেনাবাহিনী ও বিডিআরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের শুরুটা এখান থেকে উত্থান হয়েছে। এছাড়াও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন সময়ে আরোও অনেক ঘটনা ঘটেছে যা অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ভাবে ছিলো আবার কিছু ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নিয়ম রক্ষায় হয়েছে।
এরিই মাঝে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি ইশতিহার বাস্তবায়ন করতে তথা ওয়াদা অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পদক্ষেপে নিতে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ জামাতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা তখনকার সময়ের সাবেক বর্তমান এমপি মন্ত্রীদের নামে গ্রেফতারের পরোয়ানা জারি করা হলো। নিয়মনুযায়ী জামাতে ইসলামী কেন্দ্রীয় একাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হলো। ধারাবাহিকভাবে তখন শুধুমাত্র জামাতে ইসলামি নেতাদের এই তালিকায় চুড়ান্তভাবে গ্রেফতার করে বিচার কার্জের আওতায় আনতে বহু বছর যাবত জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে। এমতাবস্থায় যখনি এই বিষয়টা জামাতে ইসলামী দেশ বিদেশী অনেক রাজনৈতিক, ধর্মীয়,ও আইনি মাদ্ধমে জানান দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল ঠিক তখনি বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীর বিষয়টা মানবতাবিরোধী অপরাধে আওতায় চালিয়ে এ সকল জামাতের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিচার কাজ সম্পাদন করে ফেললেন।
একে একে জামাতে ইসলামীর শীর্ষ একাধিক নেতারা রায় যখন অদালত মৃত্যুদন্ড প্রদান করলেন,তখনি জামাত শিবিরের আন্দোলন শুরু হয়ে সারা দেশব্যাপী। জামাত শিবিরের নেতা কর্মীদের সাথে হতাহত হয়েছে অনেক সাধারন নাগরিক। হামলা, মামলা, ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছে অসংখ্য নেতাকর্মীসহ সাধারন জনগন। ঠিক তখনি নতুন করে শুরু হলো গণজাগরণ মঞ্চ নামের যৌক্তিক এবং কারো কাচে অযৌক্তিক নামের এক অস্থায়ী আন্দোলন। শাহাবাগে একে একে জড়ো হতে লাগলো মানবতাবিরোধী নেতাদের ফাশির রায়ের পক্ষে। যেখানে আদালত জামাত বিএনপি নেতা তথা যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিভিন্ন ভাবে রায় দিয়ে দিয়েছে, সেখানে নতুন করে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে আওয়াজ আসতে শুরু হলো আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে।
শেষ পর্যন্ত গণজাগরণ মঞ্চের দাবীনুযায়ী যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী জামাত ও বিএনপি নেতাদের ফাশির রায় নতুন করে দেয়া হলো। এমনকি রায়ও নির্ধারিত সময়ে কার্যকর করা হলো। ফাশির কাষ্ঠে ঝুলানো হলো।
ইতিহাস থেকে চিরতরে মুচে গেলো জঘন্য অপরাধী যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের নাম নিশানা। সকল অপকর্ম ও অন্যায় থেকে অবমুক্ত হয়ে দেশে যেখানে দূর্বার গতীতে এগিয়ে যাওয়ার কথা সেখানে এখনো সাধারণ নাগরিককে কেনো সেই জঘন্য ইস্যু নিয়ে থাকতে হবে প্রশ্ন দেশের সাধারণ জনগনের? স্বাধীনতার পরবর্তী এত বার সরকার ঘঠিত হয়ে আসছে কোন সরকারি এই দেশদ্রোহী যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে পারেনি। এমনকি কোন সরকারি এই অপরাধের নামটুকু পর্যন্ত নিতে পারেনি। বর্তমান সরকার তার দেয়া নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী বিচারের আওতায় এনেছেন এবং বিচারকাজ সম্পাদনা করেছেন। তারপরেও ইদানিংকালে যাকে তাকে আনিষ্টকারীরা এই জঘন্য অপরাধের নাম দিয়ে সমাজে হেয় করে আসছে। যে কোন খাতে গ্রাম,গঞ্জ,অলী,গলী,অফিস,আদালত,যথায় তথায় কেউ কারো সাথে বিরোধ দেখা মাত্রই সেই জঘন্য পদবিটাকে ইস্যু বানিয়ে নিজেরা আখের গোচাতে মরিয়া হয়ে উঠে। এ থেকে যতদিন পরিত্রাণ না পাবে দেশ সামনের দিকে কল্যাণ বয়ে আনবে না!